SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ভূগোল ও পরিবেশ - মহাবিশ্ব ও আমাদের পৃথিবী | NCTB BOOK

মেঘমুক্ত অন্ধকার রাতে আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় কয়েকটি নক্ষত্র বিশেষ আকৃতিতে মিলে জোট বেঁধেছে। এভাবে আমাদের পরিচিত আকৃতিতে নক্ষত্রদলকে নক্ষত্রমণ্ডলী বলে। প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক একটি নক্ষত্রদলকে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করে বিভিন্ন আকৃতি কল্পনা করে বিভিন্ন নাম দিয়েছেন। এদের কোনোটা দেখতে ভল্লুকের মতো, কোনোটা শিকারির মতো। এদের মধ্যে সপ্তর্ষিমণ্ডল ( Great Bear), কালপুরুষ (Orion), ক্যাসিওপিয়া (Cassiopeia), লঘুসপ্তর্ষি (Little Bear), বৃহৎ কুক্কুরমণ্ডল (Canis Major) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গ্যালাক্সি (Galaxy) : মহাকাশে গ্রহ, নক্ষত্র, ধূলিকণা, ধূমকেতু ও বাষ্পকুন্ডের এক বিশাল সমাবেশকে গ্যালাক্সি বা নক্ষত্রজগৎ বলে। মহাকাশে একশত বিলিয়ন গ্যালাক্সি রয়েছে (চিত্র ২.২)। এদের বিভিন্ন আকার ও আকৃতি রয়েছে, তবে এদের অধিকাংশই সর্পিলাকার বা উপবৃত্তাকার। সর্পিলাকার গ্যালাক্সিগুলো বৃহৎ আকৃতির এবং উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সিগুলো বেশি উজ্জ্বল। এরা পরস্পর ব্যাপক ব্যবধানে অবস্থিত। কোনো একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বলে।

নীহারিকা (Nebulae) : নীহারিকা হলো মহাকাশে অসংখ্য স্বপ্নালোকিত তারকার আস্তরণ। এদের আকার বিচিত্র। কিছু নীহারিকার দেহ গ্যাসীয় পদার্থে পূর্ণ। এদেরকে গ্যাসীয় নীহারিকা বলে। এক একটি নীহারিকার মধ্যবর্তী দূরত্ব ব্যাপক। এক একটি নীহারিকার মাঝে কোটি কোটি নক্ষত্র থাকতে পারে। এরা যেহেতু পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোক বর্ষ দূরে রয়েছে, তাই এদের মাঝে যেসব নক্ষত্র রয়েছে তাদের পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায় না।

ছাপথ (Milky Way) : কোনো একটি গ্যালাক্সির ক্ষুদ্র অংশকে ছায়াপথ বা আকাশ গঙ্গা বলে। অন্ধকার আকাশে এদের উচ্ছ্বল দীপ্তি দীর্ঘপথের মতো দেখার। একটি ছায়াপথ লক্ষ কোটি নক্ষত্রের সমষ্টি। শীতকালে রাত্রিবেলা পরিকার আকাশে লক্ষ করলে উত্তর-দক্ষিণে বেশ বড় পরিসরযুক্ত তেজোদ্দীপ্ত স্বচ্ছ দীর্ঘ আলোর রেখা দেখা যায়। তারকা খচিত এই আলোর পথই হলো ছায়াপথ। বিজ্ঞানীরা একে বিরাট চক্রাকার মণ্ডল বলে অনুমান করেন। সৌরজগৎ এরকম একটি ছায়াপথের অন্তর্গত।
উল্কা (Meteor) : রাতের মেঘমুক্ত আকাশে অনেক সময় মনে হয় যেন নক্ষত্র ছুটে যাচ্ছে বা কোনো নক্ষত্র যেন এই মাত্র খসে পড়ল। এই ঘটনাকে নক্ষত্রপতন বা তারা খসা বলে। এরা কিন্তু আাসলে কোনো নক্ষত্র নয়, এদের নাম ফা (চিত্র ২.৩)। মহাশূন্যে অজয় হুড়গি ভেসে বেড়ায়। এই জড়পিণ্ডগুলো অভিকর্ষ বলের আকর্ষণে প্রচন্ড গতিতে (সেকেন্ডে প্রায় ৩ কিলোমিটার) পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। বায়ুর সংস্পর্শে এসে বায়ুর সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে এরা জ্বলে ওঠে। ফলে এদের ছুটন্ত তারা বলে মনে হয়। বেশিরভাগ উল্কাপিণ্ডই আকারে বেশ ক্ষুদ্র।

ধূমকেতু (Comet) : মহাকাশে মাঝে মাঝে একপ্রকার জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব ঘটে। এদের একটি মাথা ও একটি লেজ আছে। এসব জ্যোতিকে ধূমকেতু বলে। ধূমকেতু আকাশের এক অতি বিস্ময়কর জ্যোতিক (চিত্র ২.৪)। সৌরজগতের মধ্যে ধূমকেতুর বসবাস হলেও এরা কিছুদিনের জন্য উপয় হরে পাবার অদৃশ্য হয়ে যায়। সূর্যের চারদিকে অনেক দূর দিয়ে এরা পরিক্রমণ করে। সূর্যের নিকটবর্তী হলে এদের দেখা যায় । এরা সূর্যের যত কাছাকাছি আসতে থাকে তত এর লেজ লম্বা হতে থাকে। এরা অনেক দীর্ঘ কক্ষপথে সূর্যকে পরিক্রমণ করে বলে অনেক বছর পর পর এরা আবির্ভূত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি যে ধূমকেতু আবিষ্কার করেন তা হ্যালির ধূমকেতু নামে পরিচিত। হ্যালির ধূমকেতু প্রতি ৭৬ বছরে একবার দেখা যায়।

হ্যালির ধূমকেতু ২৪০ খ্রিষ্টপূর্ব অব্দ থেকে দেখা যায় এবং সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে হ্যালির ধূমকেতু দেখা গেছে।

গ্রহ (Planet) : মহাকালে কতকগুলো জ্যোতিক সূর্যকে নির্দিষ্ট সমরে নির্দিষ্ট পথে পরিক্রমণ করে। এদের নিজেদের কোনো আলো বা তাপ নেই। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। এরা সূর্য থেকে আলো ও তাপ পার। এই ভাগেই উত্তপ্ত হয়। এরা ভারার মতো মিটমিট করে জ্বলে না। এসব জ্যোতিষ্ককে গ্রহ বলে। আামাদের সৌরজগতের আটটি গ্রহ হলো বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন।

উপগ্রহ (Satellite) : কিছু কিছু জ্যোতিষ্ক গ্রহকে ঘিরে আবর্তিত হয়, এদের উপগ্রহ বা চাঁদ বলে। মহাকর্ষ বলের প্রভাবে এরা গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এদের নিজস্ব আলো বা তাপ নেই। এরা সূর্য বা নক্ষত্র থেকে আলো বা তাপ পায়। চাঁদ পৃথিবী গ্রহের একমাত্র উপগ্রহ। কোনো কোনো গ্রহের উপগ্রহ আছে, কোনোটির নেই। বুধ ও শুক্রের কোনো উপগ্রহ নেই। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন উপগ্রহ আবিষ্কৃত হচ্ছে ।
কৃত্রিম উপগ্রহ মানুষের তৈরি বিভিন্ন উপগ্রহ আছে যারা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। এদের বলে কৃত্রিম উপগ্রহ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, তথ্য আদান-প্রদান, গোয়েন্দা নজরদারি, খনিজ সম্পদের সন্ধান, পরিবেশ দুষণ নির্ণয় ইত্যাদি কাজে এসব কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়।

Content updated By